অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ব্রাজিলের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর পরাজয়ে চিন্তার ভাঁজ পরেছে ইসরায়েলের কপালে। ইসরায়েলপন্থী এই সাবেক রাষ্ট্রপতিকে হারিয়ে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির আসনে বসতে যাচ্ছেন বামপন্থী লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ইসরায়েলের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ার কারণ লুলা কট্টর ইরান ও ফিলিস্তিনপন্থী। ব্রাজিল-ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক আর দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট, দুই নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরাজয়ে যেন শোকের ছায়া ইসরায়েলে।
জেরুজালেম পোস্টের বিশ্লেষণ বলছে, জেরুজালেম এই সপ্তাহে ব্রাসিলিয়াতে একজন বন্ধুকে হারিয়েছে।
২০১০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় প্রথম ইসরায়েল সফর করেন লুলা। সফরটি ছিল প্রথম কোনো ব্রাজিলিয়ার রাষ্ট্রপতির ইসরায়েল সফর। বিশেষ কিছু কারণে সেই সফরটি তখন বেশ বিতর্কিত হয়েছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি লুলার সমর্থন।
বছরটি ছিল জায়নবাদী স্বপ্নদ্রষ্টা থিওডর হার্জেলের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য থিওডর হার্জেলের সমাধি পরিদর্শন করার আয়োজন করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লুলার সফরের কয়েক সপ্তাহ আগে হার্জেলের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন। কিন্তু ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা তা করতে অমত জানায়। সে সময় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভিগডর লিবারম্যান প্রটোকল লঙ্ঘনের অভিযোগে লুলার সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন।
তবে সেসময় রামাল্লায় ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন লুলা। তৎকালীন মিডিয়া রিপোর্ট বলছিল, লুলা দা সিলভা হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলেন। কেননা তিনি মনে করতেন এর মাধ্যমে শান্তি ও পুনর্মিলনকে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে। তবে বৈঠক করতে পারেননি তিনি।
পরে ২০১০ সালেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় ব্রাজিল। এরপর এই ধরনের স্বীকৃতির ঢেউ বয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে। জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার জন্য রামাল্লার বিডসহ একতরফা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন লুলা। এই বছরের জুনে একটি ইভেন্টে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ এবং সংহতির যোগ্য।’
ইরানের প্রতি লুলার সমর্থন
লুলা তার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ইরানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। তিনি ইহুদি ও সমকামী বিদ্বেষী ইরানী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে হোস্ট করেছিলেন এবং তেহরান সফর করেছিলেন। তিনি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞারও বিরোধিতা করেছিলেন।
যখন একজন ইরানী মহিলাকে ব্যভিচারের দায়ে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তখন লুলা বলেছিলেন, ‘আমাকে একটি (বিদেশি) দেশের আইনকে সম্মান করতে হবে। ইরানের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব এবং তার প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা থাকে তা মূল্যবান। কিন্তু এই মহিলা যদি ইরানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে তবে আমরা তাকে ব্রাজিলে গ্রহণ করব।’
লুলার উত্তরসূরি ছিলেন দিলমা রুসেফ। তিনি তার চিফ অব স্টাফ ছিলেন এবং তিনি প্রেসিডেন্সি ত্যাগ করার পরেও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত ছিল, যার মধ্যে তিনি তাকে চিফ অব স্টাফের পদে নিযুক্ত করেছিলেন। ২০১৪ সালে অপারেশন প্রোটেক্টিভ এজ এর প্রতিবাদ করার জন্য রুসেফ ইসরায়েলে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছিলেন এবং তিনি ব্রাজিলে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত দানি দায়ানের পছন্দকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি গ্রিন লাইনের ওপরে থাকতেন। ফিলিস্তিনিরা তার কার্যকালের সময় ব্রাসিলিয়ায় একটি দূতাবাস চালু করে।
২০১৯ সালে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন ব্রাজিলের বলসোনারো। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশের মতো ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টান এবং ইসরায়েলের পক্ষে তার সমর্থনে সোচ্চার। এই সপ্তাহে নির্বাচনের দিনও তার স্ত্রী ইসরায়েলি পতাকা সম্বলিত সহ একটি শার্ট পরেছিলেন।
ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলসোনারোর উদ্বোধনে যোগ দিয়েছিলেন এবং তারা একসঙ্গে একটি সিনাগগ পরিদর্শন করেছিলেন। তিন মাস পরে, বোলসোনারো ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। যাত্রাপথে ওয়েস্টার্ন ওয়ালে নেতানিয়াহুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
বলসোনারো বলেছিলেন তিনি ব্রাজিলের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন। তবে এটি আর করা হয়নি শেষ পর্যন্ত। এটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতো ব্রাজিলের। তবে সেসময় এক বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন বলসোনারা। হলোকাস্টের অপরাধ ক্ষমা করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করে বসেন তিনি। ফলে ব্রাজিল এবং অন্যান্য দেশের ইহুদিরা তার ওপর ক্ষেপে যায়।
এছাড়াও বলসোনারো সমকামী বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন, ব্রাজিলের প্রাক্তন সামরিক শাসনের প্রশংসা করেছিলেন এবং আমাজন বন উজাড়ের অনুমতি দিয়েছিলেন। এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে দেড় বছর কারাগারে কাটিয়েছেন লুলা। কিন্তু বিচারিক অসদাচরণের কারণে পরে রায়টি বাতিল করা হয়েছিল। তিনি গণমাধ্যমের বৃহত্তর সরকারি নিয়ন্ত্রণের জন্যও চাপ দেন, বাকস্বাধীনতা সীমিত করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ইরানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।
Leave a Reply